আইপিএল হবে তো?

করোনার ভয়কে পাশ কাটিয়ে এক আইপিএল আয়োজন করতে কতো পরিকল্পনাই তো করলো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড! শেষমেশ টুর্নামেন্ট স্থানান্তর করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতে। কিন্তু আইপিএল শঙ্কামুক্ত হতে পারলো কই? অন্তত করোনার হাত থেকে কি রেহাই পেল?

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে অনেক ক্রিকেটার-আয়োজক সবাই বলেছেন, একজন করোনা রোগী পাওয়া গেলেই পুরো টুর্নামেন্ট ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। তাদের সেই শঙ্কাই কিন্তু বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে চেন্নাই সুপার কিংসের ক্রিকেটার সহ ১১ জন সদস্যের দেহে ভাইরাস ধরা পড়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পুরো দলই চলে গেছে কোয়ারেন্টাইনে। আলাদা করে ফেলা হয়েছে আক্রান্তদেরকে। বাতিল করা হয়েছে নির্ধারিত অনুশীলন সূচি। এরমধ্যেই দলটির তারকা ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়না খেলা বাতিল করে ফিরে গেছেন দেশেও। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, করোনার ভয়েই টুর্নামেন্ট বর্জন করেছেন রায়না।

আইপিএল আয়োজনের জন্য কড়া ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছিল বিসিসিআই। দেশ থেকে আরব আমিরাত পর্যন্ত পৌঁছাতে সবাইকে ৩ বার করে করতে হয়েছে করোনা টেস্ট। তাও ফাঁক গলে আরব দেশটিতে পৌঁছুনোর পর করোনা শনাক্ত হয়েছে কয়েকজনের দেহে।

সবগুলো দলই পৌঁছে গেছে আরব আমিরাতে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের পাশাপাশি এবিডি ভিলিয়ার্স সহ অনেক বিদেশি ক্রিকেটারও এরইমধ্যে চলে এসেছেন। বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরসহ বেশকিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি শুরু করেছে অনুশীলনও। তবে এখনও টুর্নামেন্টের পূর্ণাঙ্গ সূচিই চূড়ান্ত করতে পারেনি আয়োজক কমিটি। অথচ টুর্নামেন্টের বাকি আর হাতে গোণা কয়েকদিন!

সূচি নির্ধারিত না হলেও, ১৯ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল আসরের সবচেয়ে সফল দুই দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংসের। কিন্তু ধোনির দলে করোনা থাবা দেয়ার পর, শঙ্কার মুখে সেই ম্যাচটিও। কারণ ৬ দিনের পরিবর্তে চেন্নাইকে এখন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে ১৪ দিন। ফলে পর্যাপ্ত অনুশীলন করতে পারবে না দলটির ক্রিকেটাররা। তাছাড়া যে দলের এতজন সদস্য করোনা আক্রান্ত, তাদের সঙ্গে উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে চায়না মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সও, এমনই খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় একটি গণমাধ্যম।

আয়োজকরাও বিকল্প ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘চেন্নাই সুপার কিংসের পরিবর্তে উদ্বোধনী ম্যাচে দেখা যেতে পারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে। কারণ প্রথম ম্যাচেই তারকাদেরকে মাঠে দেখতে চাইবে সবাই। যদি ধোনি না থাকেন, সেক্ষেত্রে বিরাট কোহলিই প্রথম পছন্দ।’

এরইমধ্যে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। ফলে তারা একের পর এক অভিযোগ ছুঁড়ছে বিসিসিআইয়ের দিকে। একজন ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তা জানিয়েছেন, আমরা যখন প্র্যাকটিস করছিলাম হুট করে ইলেকট্রিসিটি চলে যায়। এভাবে তো প্র্যাকটিস করা যায় না।

অন্য একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির একজন অভিযোগ করেছেন, আমাদের স্টাফরা এখনো ট্র্যাকিং ডিভাইস পায়নি।

তৃতীয় আরেকজনের অভিযোগ, আবুধাবি এবং দুবাইয়ের কোভিড আইন একেকরকম। ফলে বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদেরকে।

এছাড়াও বায়ো সুরক্ষা বিধিসহ করোনা মোকাবেলায় বিসিসিআইয়ের নেয়া পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তা।

সম্প্রতি একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে দাবি করে আয়োজকদের কাছে লভ্যাংশ দাবি করেছে।

তবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর এত এত অভিযোগে একেবারেই কর্ণপাত করছে না বিসিসিআই। তারা শুনেও যেন শুনছে না। এমনই একটি অভিযোগও এসেছে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষ থেকে!

এদিকে, দ্রুতই বিসিসিআইয়ের কাছে পূর্ণাঙ্গ সূচি চেয়েছে দলগুলো। যদিও এতসব বিপত্তির মাঝে এখনও সূচির বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি আয়োজকরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আইপিএলের প্রথম ২০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে পারে দুবাইয়ে। কারণ ৮টি দলের ৬টি দলই এখন অবস্থান করছে সেখানে। কেবল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স আছে আবুধাবিতে। এই দুই দলকেও হয়তো দুবাইয়ে চলে যেতে হবে। তবে তার আগে আরো একবার নিজেদেরকে প্রমাণ করতে হবে করোনা নেগেটিভ।

১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে আইপিএল। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবেই আর কি!

আপনি আরও পড়তে পারেন